চেতনার ভেতর পরবাসের নিঃসঙ্গতার অচেনা স্পন্দন: আঘাত-ধ্বনি

পরবাসে চেতনার ভেতর নিঃসঙ্গতা যেন এক পরবাসী বাক্য রচনা করে চলে—নিঃশব্দ অথচ তীব্র। পরবাসের আঘাতে মানবমনের প্রতিক্রিয়া স্থানান্তরিত হয় ভেতরের জগতে, যেখানে শুরু হয় এক অন্তর্জাগতিক ভ্রমণ। অচেনা স্পন্দনের ধ্বনি বাজে শহরের নিস্তব্ধ হৃদয়ে—“নগরের মনটা! কেউ চিনলো না আমার?” শিশুসুলভ আকাঙ্ক্ষা থেকে দিনের পর দিনে নিঃসঙ্গ চেতনায় বেঁচে থাকে পরবাসী মন। লুকিয়ে আছে পরিবারের অত্যাচার,পরিজন ছেড়ে বোঝা ছেলেটির বাইরে থাকা। পরিশ্রম করতে হবে সৌভাগ্যের প্রস্তুতিতে

পরিবারের অবহেলিত সন্তান থেকেই জন্ম নেয় নিঃসঙ্গতার গভীরতা। আঘাত দৃশ্যে, ধ্বনি শুধু বেদনার নয়, বরং আত্ম-উন্মোচনেরও সুর। প্রথম শিশু আচরণেই মনের আকাঙ্ক্ষায় তৈরি হয় পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকা। পরবাসী মেঘ ধীরে ধীরে বিস্তার করে চলে শিশু আকাশেই। অনন্ত ভিড়ের মাঝে খুঁজে ফেরেন নিজের অস্তিত্বের সাড়া, যাহাতে নিঃসঙ্গতার ধ্বনি বাসা বাঁধে অচেনা নগরের কবি-চেতনা একদিন। উঠে আসে অচেনা স্পন্দন মানবমনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে।

আজ এই প্রতিক্রিয়াই পরবাসের দিনগুলোকে একরাশ শব্দহীনতার ভেতর দিয়ে তৈরি করে অদৃশ্য অভিধান। সেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন একেকটি অনুবাদ, আর মনের লুকিয়ে থাকা ভাষা বদলে, নতুন অভিধানে উচ্চারণ। ব্যস্ত শহরের আলো এবং নিঃসঙ্গ সন্ধ্যা গড়ে দ্বৈত জীবন। মিলেমিশে অস্থিরতার বাহির ও অন্তর প্রবেশ দ্বার। পরবাসী মনটা আমার কেউ চিনলো না বলে–শৈশব-গৃহে ফিরতে অক্ষমতার বোধই হয়তো গভীরতম যন্ত্রণা।

ভাষার ধ্বনিতে আত্মভ্রমণ পথে চেতনার ধীর অন্তর-প্রবাহ—পরের চিন্তা। অক্ষর গলিত অশ্রু নিঃসঙ্গতার মেঘে ঢাকে এবং প্রতিটি শব্দ হয়ে ওঠে পরবাসের প্রতিধ্বনি। অভিমানের আঘাত জানিয়ে দেয়—বেদনা কেবল ক্ষয় নয়, সৌন্দর্য চেতনাও। মহাকাব্য নির্মাণ মনোজগতে—নগর আর অন্তর মিলেমিশে যায় এক অব্যক্ত সুরে

পরবাসে মানবমনের প্রতিক্রিয়া ভেতরে অচেনা নগরের কবি-চেতনা

আজকের এই অবহেলিত ছেলে যখন পরিবার পরিজন ছেড়ে দূর পরবাসিনী, তখন তার মানবমনের প্রতিক্রিয়া ভেতরে নিঃসঙ্গ পরবাস কাটে। ছোট বেলার সেই কবি চেতনা, অচেনা নগরের দ্বারপ্রান্তে ঘুরপাক খায়। মানব মনের অভিব্যক্তি নিঃশেষ স্তরে ভূমিকার পথ ধরে পিছনে ফিরে তাকায়। ধ্বনিময় ক্রমশ নীরবতার দিকে যাত্রা।

চিন্তা, অনুশোচনা ও অব্যক্ত অনুভূতির আশ্রয়—খোঁজে নতুন স্থাপত্য। মিলিয়ে পায় নিজের ভেতরের অচেনা নগর। কোলাহল যেন মনোজগতের নিস্তব্ধতার বিপরীতে প্রতিধ্বনি হয়ে বাজে। ক্লান্তির কাঁতে নিঃশেষ হয় ভাষা।

শিশু আকাঙ্ক্ষা থেকে অণুচ্ছেদকৃত কবিতাংশটি হলো:—
“প্রবাসী লালনায় আমি ছিলাম এক ছোট্ট বালক
করেছিলাম পণ- প্রবাস পাড়ে যাব আমি নিশ্চিত।
প্রবাস দ্বারে হবে মোর আপন ঠিক ঠিকানার পথ।”

শৈশবের প্রতিজ্ঞা পরায়ন, পরিণত বয়সে পরবাসের রূঢ় বাস্তবতায় ধ্বনির ঝংকার তোলে। তখন যে পণ করেছিলাম তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আপন গৃহের মাটি তারা দেয় নিজের ঠিকানা খুঁজতে।

কিন্তু হারিয়ে যাওয়াতেই ঠিক ঠিকানার কবি চেতনার—অভিবাসন। বেদনায় শ্রম পায় উন্মোচনের কান্তি। পরবাসী মন দাঁড়িয়ে দেখি, আমি কেবল শ্রমিক নই, আমি সেই আশা নিয়ে চাকা ঘোরানোর ছোট্ট বালক। অচেনা নগরে লিখে কলম চালাই।

জোরালো কণ্ঠে কবি মনে গেয়ে যাই:—“ও সে দুঃখ মোর ভুলে যাবে আপন মালার গলাতে
নবীন রাজত্বে ছিনিয়ে নেব যত দুঃখ ভরাট।”
দুঃখ আমার যাবে ভুলে আপন গলনালীতে, তারপরে মালাকে আনবো কিনে, যা কষ্টকে তাড়িয়ে, পরবো গলায় মালা। গানটা এমনই গলায় বেঁধে ওঠবে! যেমনই গানের সুর বাঁধে। ভরাট আকৃতির কাজের বেদনা মাইল ফলক তাক নিশানা লাগায় “ও সে নবীন রাজত্বে”। রাজ দরবারের তরবারী কেড়ে নেবো আজ “যত দুঃখ ভরাট এ”

এইভাবেই শিশুকালের অচেনা নগরের কবি-চেতনা। নগরজীবনে এক নতুন সুরে অনুবাদ হয়—সুর-বেদনা ও সৌন্দর্য একে অপরের প্রতিস্বর।

চেতনার ভেতরে পরবাসের অচেনা স্পন্দনে নিঃসঙ্গতার আঘাত-ধ্বনি

চেতনার ভেতরে পরবাসের অচেনা স্পন্দন নিজেকে ডুবিয়ে রাখে—ডুব কাজীর ব্যস্ততায়। আশ্রয় মনো নিবেশনের রেখা, অদৃশ্য বাজিতে ডুবিয়ে যাওয়া নিয়োজিত ভেলায়; বেজে বাজায় নিজের স্পন্দন রাশি। হৃদয়ের ভেতর আঘাতের মতো তীক্ষ্ণ, অথচ সংবেদনশীল।

শূন্যতাকে ঢাকতে না ঢাকতেই আসে শহরের কোলাহল কলাতলী। নীরব যন্ত্রণা যন্ত্রের মতো বুকের পাঁজরে খাঁচা বিধ্য হয়। চেতনার ভেতর পরবাসের আঘাত কেবল রোজগারের গল্প নয়, এটি মনের একান্ত সঙ্গীহীন ভ্রমণ।

হঠাৎ অনুভব চিৎকার করে ওঠে, আর শব্দকে কর তালি দিয়ে লিখে ফেলা যায় হয়তো এভাবেই—“নিশি অবসন্নে জুটিলো মোর পণ বিষাদের ভবে
প্রবাস বাসনায় আমি এক শূন্য তীরের বসতি।
তীর হারা কূলের ঢেউয়ে ভেসে যাই অচেনার কূলে,
আশাহীন প্রবাস আমার কেটে যায় নিশিদিন ভরে।”

অনেক আশা আখাঙ্খার পর জুটিলো সেই কাঙ্খিত পরবাস যাপন এবং যাপনের অনুমতি। বিষাদ চিন্তা ধারার মধ্যে দিয়ে একমাত্র আশা কে পেয়েছি বিষাদের ভবে। যন্ত্রণাকৃত মনকে আচ্ছাদ্রিত ভাবে লালন পালনের পোষে পরবাসিনী অর্থ পূরণে—আমি নিজ দ্বারপ্রান্তে। পরীক্ষার পর পরীক্ষার-দিনকে পার করে সন্ধ্যার আলো নিভু নিভু পর্যায়ে অবশেষে বিদেশ যাওয়াতে পেয়ে গেছি চাবিকাঠি দোলা।
তবে এখনো এ যেন এক নতুন বিষাদের ভাব স্তর শুরু।

সব মনুষ্যকালই শূন্যতার বসতি থেকে বাসনাপতিত হয়,
তবে এই প্রাণে আকুলিত বাসনায় ছিলো অনেক লুকিয়ে থাকা প্রাণ মনো-দিনো-দিন। ছুতে চায় তীর হারা কূলের ঢেউয়ে, যাকিনা কূল কিনারা, বা অবস্থান খুঁজতে অনেক ক্লান্তির ঘাম ঝরে আসে। ভাসতে ভেলার দোলোন যাই অচেনার কূলে, আর চিনে নেই অচেনা নগরের কবি-চেতনার ভুবন।

প্রথম-প্রথম দিকে কেটে যাওয়া নিশিদিনগুলোকে ভেবে আকাশে কষ্টের চাপে উড়াল পংখী হয়েও চোখে ঝরে জল। আশাহীন অনেক বার্তাকে পৌঁছে দিতে চায় সেই নিশিদিন ভর আশা।

অচেনা নগরের কবি-চেতনা মানবমনের পরবাসী মনটা আমার কেউ চিনলো না

প্রতিদিন অচেনা নগরের ভেতর নিজেকে খুঁজে ফিরি। চারপাশে ব্যস্ত মানবের পরিচালিত পাদক দুলা মিশিত, শ্রম মিশ্রিত কাদার দাগ। আলোক যান্ত্রিক কোলাহলে আমার নিজের ছায়ার অস্তিত্ব নেই। ক্যালেন্ডারের পাতায় অতিবাহিত সময় ঘন্টা টিক টিক সুরেলায় আমায় না নির্দেশনা দিয়ে, হৃদয়ের ধ্বনি ফেঁপে কান্না জল ফেলে। এই অচেনা শহরে মিশে থাকা মানবমনের পরবাসী মনটা আমার কেউ চিনলো না। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয় নিঃসঙ্গতার কবি-চেতনার স্পন্দনে।

শব্দের মধ্যে আছি আমি বহু বছর জাগতিক চিন্তে, অপরদিকে স্পন্দনের চিহ্ন কেউ টের পায় না। শুধু নির্দেশিত অর্ডারে শরীরকে উপস্থিত রাখি উপার্জন হবে বলে। শহরের জানালাগুলো প্রতিদিন চোখ মেলে দেখা পায় অফিস ফেরার রাস্তায়। এতো আঘাত বহমান আমি শুধু লিখি যাই কলম হাতের ধ্বনি।

তাই রচনাকৃত ভাবপ্রকাশ হলো:—“যত লালনার্থ আশা আমার নেই তার আলোছায়া,
যত চেতনার্থে লালিত আমি নেই কো তার প্রবেশ।
তবুও দিশেহারা পথে মোর প্রবাস-চেতনার বাস।”

তীরের ক্ষত শুকিয়ে যায়, তবে মুখের কথার আঘাত শুকায় না। যত লালন-আদেশে তীর শুকনা-তরী ভেজে না প্রতিস্থাপনের জল স্রোতে। আমি আর আমি নেই যখন কেউ চিনলো না। ইচ্ছে বাঁধনের স্থাপনে আলোছায়ার আলোক প্রতিফলন ছোয় না, এ যেনো পরিবারের এক অবহেলিত সন্তান মুখ আবার।

যত কোষ শক্তিতে লালিত আমি কোথাও কোনো লাল ভিশাসক্ত প্রবেশ-দ্বার, দরজা না খোলা। খুলতে মন, দরজার লগি আমি স্থির—তবুও লগি ভাঙ্গনকে সেরে নেই আবার নতুন যাত্রাতে। জানি পরিবার মেনে নিবে না, অত্যাচারিত ছেড়া বাহির দিকে নতুন নগরের নেশায় এতবার আমি। অবশেষে ঠিকানা হলো: পরবাসী বাক্য রচনা-তে।

পরবাসী আমি কেবলই এক অচেনা জীর্ণতা, যে নিজের দেশ, ভাষা, ভালোবাসা—সব হারিয়ে ফেলেছে এক অদৃশ্য ছায়ায়। যতবার ভুলে যায় দিশেহারা পথে, বেহুশ ঠিক রেখে শিশুমনের সেই চেতনাকে তা দেই ফুলিয়ে নেওয়ার জন্য। কেউ চিনে না সেই মন, যেখানে শ্রোতাবিহীন শব্দমালা বুনে। কেউ ছুঁতে পারে না তৎক্ষনা স্পন্দন। পরবাসী মেঘ জমেছে মানবমনের প্রতিক্রিয়াতে।

প্রতিক্রিয়া, এমনিই প্রতিক্রিয়া যেথায় কালী পেন্সিলে একাকার পাতা ভরণ মলাট, যার বাঁধানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। চেতনার ভেতর পরবাসের আঘাত জন্ম নেয় কথা বলার বই প্রকাশনী।

প্রতিক্রিয়া পরবাসিনী মনটা আমার আঘাত স্পন্দনে কেউ চিনলো না

নিত্য-নতুন পরবাসিনী মনটা আমার দেখি অচেনা প্রতিক্রিয়া, যা চেতনার ভেতরে পরবাসের একেকটি অনুচ্চারিত কান্না-কথা। হাসির আড়ালে যন্ত্রণা দায়ক, সময়ের যান্ত্রিক ঘূর্ণিতে গলে যাওয়া নিজের পরিচয়ের রেখা কেউ বোঝে না। পরবাসে চেতনার ভেতর নিঃসঙ্গতার কথা-ধ্বনি জমে থাকে অন্তরে। নীরব পরিত্রান আকৃতির স্পন্দন হয়ে ওঠে। আমার নিত্য-দিনের প্রতিক্রিয়া কারও কানে পৌঁছায় না, শুধু মন-মাঝির গহীনে জন্ম নেয় এক অদৃশ্য পাতা-ঝরা ঝড়। এই অভূতপূর্ব ঝড় আমাকে প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেয়—আমি আছি, কিন্তু চিনে নেয় না কেউ।

শুকনো পাতার সম্পর্ক শুকিয়ে যায়, কিন্তু গাছ-জন্মা পাতা বিন্যাসে চারা বুনতে থাকি নিজেরই রক্তে লিখিত সেই না-বলা কথাগুলো।
পাতা গুলো মুখ বিন্যাসে চেহারা রূপ:—“শত মুখের ধ্বনি মুখরিত প্রবাস আসর আমার,
টেনে যায় ব্যস্ত সম্মুখ মাঠের অতিব্যস্ততা।
নিমগ্ন কর্মে জন্মে পরিচিত সম্মুখ মাঠ।”

অনেকে অচেনা পরবাসী মেঘ মুখরিত বাতাস বয়ে আনে। কালো মেঘে মেঘ-বালকের ঘন আসর ধূসর প্রান্তরীত—পরিবার পরিজন ছেড়ে পরবাসী বাক্য রচনায় লিপ্ত। গহীন জঙ্গলের অতিব্যস্ততার মাজ পথ ধরে চলে আসে টানা টানির ব্যস্ত সম্মুখ মাঠ। কর্মে-ঘেরা নিমগ্নতা প্রতিপালন আকাশে জন্মের পরিচিত সম্মুখ মাঠ খেলা সজ্জায় সবুজ ঘাসে, কাটতে হবে।

আমার কলমের স্পষ্ট কালিতে, শেষ পংক্তি তিনটি—
“কোলাহলের ভিড়ে আমি এক ঘূর্ণি পাকের চক্র,
ঘূর্ণিতে বন্দী অচেনা নগরের ব্যস্ততা মোর।
প্রাঙ্গন ফোঁটায় কাঙ্খিত আস্থা গৌরব তরে।”

কোলাহলের ঘূর্ণি বন্দীতে অচেনা নগর আমায় প্রতিদিন নতুন করে গিলে খায়, আবার ফিরিয়ে দেয় নিঃসঙ্গতার আলোছায়া ও আঘাত-ধ্বনি। আত্মার কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যস্ততার ঘূর্ণিতে চোখে নেই থামার সময়। অবিরাম ঘুরতে থাকি—ঘূর্ণায়মান নিজেরই আবর্তে। আমি যেন এক বন্দি শালার পাঠ-শালিকা, চক্র কারে নগর ব্যস্ততা মোর, আগমন বার্তা পঠিত পাঠদান বন্দি ঘূর্ণিতে।
অন্তর বর্ণিত ঘূর্ণি বার্তা চক্রাকার পাঠদানে শেষমেশ ফোঁটায় কাঙ্খিত আস্থা প্রাঙ্গণ পদদলীতে। তরান্নিত গৌরব অনায়াসে চিহ্নিত মাঠে ঘাস ফুল ফোঁটায়।

বিদায় বলি নিঃশব্দে—শহরকে নয়, নিজের এক অংশকে।
নিজেকে চেনার আলোতে বিদায় ভাষায় গেঁথে নেই।
ঘূর্ণি থেমে গেলে, পরবাস থেমে গেলে, রয়ে যাবে শুধু এক অনুরণন—
চেতনার ভেতরে প্রাঙ্গণ ফোঁটার মতো নীরব আস্থা,
যেখানেই আমি, সেখানেই আমার গৌরব।

Leave a Comment